পানের রসের তীক্ষ্ণতায় আছে জীবাণুনাশক গুণ। সেই জন্যে পরিমিতভাবে পান খাওয়া দাতঁ ও মুখের পক্ষে ভাল। পানে একটি বিশেষ ধরনের তৈল পদার্থ আছে- সেইজন্যে পান মুখশুদ্ধি করায়, দাঁতের পচে যাওয়া রোধ করে এবং পেটে পাচক রসকে উত্তেজিত করে খাবার তাড়াতাড়ি হজম করিয়ে দেয়।
বলা হয় পানের সরু ডগায় আয়ুষ্য, মধ্যে লক্ষ্মী আর মূলে যশের আবাস। সেইজন্যে পান সাজবার সময় এই সব অংশ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।
পান খাওয়ার উপকারিতা:-
১। পানের রস পাচক, অগ্নিদীপক অর্থাৎ খিদে বাড়ায় এবং বায়ু হরণ করে। সেইজন্যে পানের রস পেটে গেলে বায়ু নীচে বসে যায়, তৃপ্তির ঢেকুর ওঠে এবং পেটে একটা শান্তির ভাব অনুভব করা যায়।
২। খাওয়া-দাওয়া পরে একটা করে পান খাওয়া ভাল। ভোজনের পরে যদি মুখের ভেতরে তেলতেলে ভাব উৎপন্ন হয়, যদি দাঁতের মধ্যে খাবারের কণা আটকে গিয়ে থাকে আর যদি দাঁতের গোড়ায় পোকা ধরে গিয়ে থাকে তাহলে পান খেলে সে সব দোষ নষ্ট হয় এবং মুখ সুগন্ধিত হয়।
৩। পানে চুন ও খয়ের থাকে। তার ওপরও এলাচ, ধনের চাল, মৌরি, সুপুরি লবঙ্গ প্রভৃতি মশলা দিয়ে পান সাজা হয়। এগুলির আছে নানা গুণ। চুন বাত ও কফ হরণ করে, খয়ের পিত্তের প্রকোপ দূর করে।
৪। পান রসে তীক্ষ্ণ, কটু, কষায়, উষ্ণবীর্য(কড়া-শরীর গরম করে), পিত্ত-প্রকোপ বাড়িয়ে দেয় এবং বাঁয়ু প্রকোপ কম করে। কিন্তু চুন ও খয়ের সহযোগে খেলে পান ত্রিদোষ(কফ, বাত ও পিত্ত)নাশক হয়ে যায়। ভাতের পরে একটা পান চিবিয়ে খেলে মন তৃপ্ত ও প্রফুল্ল হয়।
৫। পান সকালে খেলে তাতে সুপুরি, দুপুরে খেলে তাতে খয়ের আর সন্ধেবেলা খেলে তাতে চুন বেশি দেওয়া উচিত(অবশ্য গাল যেন না পুড়ে যায়)। এই পদ্ধতিতে পান খেলে সকালবেলা কফ, দুপুরবেলা পিত্ত আর সন্ধেবেলে বায়ুর সমতা বজায় থাকে।
৬। স্নিগ্ধ, মধুর ও গরিষ্ঠ ভোজনের পর পান খেলে স্বস্তি পাওয়া যায়-বিশেষত উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ুর দেশে যাঁরা থাকেনে এবং যাঁরা ভাত খান তাঁদের ভোজনের পর একটি করে পান খেলে বেশি উপকার হবে।
৭। পানের চুন যাতে শরীরের ক্ষতি ন করে সেইজন্যে পানে খয়ের মেশানো হয়। শুধু চুন রক্তে মিশে যেতে পারে না কিন্তু পানের ক্লোরোফিল বা সবুজতার সঙ্গে এক হয়ে গিয়ে সহজে হজম হয় যায়। এতে দাঁতের উপকার হয় এবং পেটের পাচক রসও কাজ করে তাড়াতাড়ি।
৮। পান স্বচ্ছ, রুচি উৎপাদক, তীক্ষ্ণ, উষ্ণ, কষায়, মল পরিষ্কার করে, কটু, ক্ষারযুক্ত, রক্ত এবং পিত্তকারক, হালকা, বলপ্রদ, কফ, মুখের দুর্গন্ধ, বায়ু নাশক এবং শ্রম দূর করে।
৯।পান কফ নাশক। পানের ভেতরের বিশেষ প্রকারের সুগন্ধিযুক্ত তেল শ্বাসনালীর ভেতরটা যদি কোনো কারণে ফুলে যায় তা সারিয়ে দেয়।
১০। পানের শিকড় তীক্ষ্ণ, স্বরশোধক, কফনাশ করে। যদি কোনো কারণে গলা বসে যায় তো পানের শিকড় বাজারেও পানের দোকানে পাওয়া যায় খেলে গলার স্বর খুলবে।
১১। একটি বা দুটি পান পাতা চিবিয়ে নিলে সর্দিতে উপকার পাওয়া যায়।
১২। পানের শিম্বির(পান গাছে যে সিমের মতো ফল হয়) চর্ণ মধুতে মিশিয়ে চাটলে সর্দির জন্যে যে কাশি হয় তা সেরে যায়।
১৩। পাকা পান আর সজনের ছাল একসঙ্গে নিয়ে রস বের করে তিন দিন নিয়ম করে খেলে অন্তে যদি বায়ুর সৃষ্টি হয় তার উপশম হবে।
১৪। পানের রসে মধু মিশিয়ে চাটলে অধোবায়ু মুক্ত হয়। ছোট বাচ্চাদের গ্যাস আর বদহজমে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায়।
১৫।পান পাতায় রেডির তেল লাগিয়ে একটু গরম করে ছোট শিশুর বুকের ওপর রেখে কাপড় গরম করে হালকাভাবে সেঁকে দিলে শিশুর বুক ভরা কফ দূর হয়।
১৬। প্রসূতা স্ত্রীর যদি বুকের দুধ খুব বেড়ে গিয়ে স্তন্য ফুলে যায় এবং ব্যথা হয় তাহলে পান পাতা গরম করে বাঁধলে অতিরিক্ত দুধ বেরিয়ে গিয়ে ফুলো কমে যায় এবং ব্যথাও কমে।
১৭। পানের রস চোখে দিলে রাতকানা রোগে উপকার হয় এবং চোখের ব্যথারও উপশম হয়।
১৮। পানের গরম রস কানে দিলে কানের ব্যথা সারে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply