বেলজিয়াম-জাপানের ম্যাচটাকে কী বলবেন? নাটকীয়তা? না অঘটনের মুখ থেকে ফিরে আসা বেলজিয়াম? অবশ্য অঘটন বেলজিয়াম এর জয়, না জাপানের পরাজয়, সেটা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক থাকতেই পারে।
স্কোরলাইন বলছে, ম্যাচটা ৩-২ গোলে জিতে শেষ আটে উঠেছে বেলজিয়াম। আর তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিয়েছে জাপান। কিন্তু স্কোরলাইন এই ম্যাচের নাটকীয়তা বোঝাতে যথেষ্ট নয়। ম্যাচটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বলতে পারবেন, গতি, আক্রমণ আর পাল্টা–আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসেছিল দুই দল। বেলজিয়াম শুধু কাগজে-কলমেই জয়ী। আসল জয়ী তো ফুটবল—যেখানে জাপানের অবদানও কম নয়।
যোগ করা সময় থেকে শুরু করা যায়। ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে গড়াতে না দিতে দুই দলকে ৪ মিনিট সময় দিয়েছিলেন রেফারি। এই সময়ের মধ্যেই দুই দল তিনটি করে আক্রমণ করেছে। এর মধ্যে তৃতীয় মিনিটে কিউসিকি হোন্ডার ফ্রি কিক দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। তবে কোর্তোয়ার আসল ভেলকি অন্যখানে।
তাঁর সেই সেভ থেকে কর্নার পেয়েছিল জাপান। ২-২ গোলের গিঁট খুলতে সেই কর্নার তাঁরা কাজে লাগাতে পারেনি। উল্টো বলটা গ্রিপ করেই বিদ্যুৎগতিতে সতীর্থকে দিয়ে দেন কোর্তোয়া। বেলজিয়ামের এই গোলরক্ষক বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বলটা দ্রুত না ছাড়লে বেলজিয়াম জয়সূচক গোলটা পেত না, বরং ম্যাচ গড়াত অতিরিক্ত সময়ে।
কিন্তু কোর্তোয়ার কাছ থেকে বল পেয়েই কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠে বেলজিয়াম। কেভিন ডি ব্রুইনা থেকে বল পান টমাস মনিয়ের। ডান প্রান্ত থেকে তাঁর ক্রস রোমেলু লুকাকু ডামি করলে ফাঁকায় বল পেয়ে যান নাসির শাদলি। আলতো টোকায় বলটা জালে পাঠিয়ে তিনি বেলজিয়ামকে শুধু শেষ আটেই তোলেননি, সঙ্গে জাপানিজদের অশ্রুধারাও বইয়ে দেন।
বেলজিয়ামের জয়সূচক এই গোলের আগে থেকেই ম্যাচের চিত্রনাট্য হয়ে উঠেছে রোমাঞ্চকর নাটকের মতো। সময় গড়িয়ে চলার সঙ্গে পেন্ডুলামের মতো দুলেছে ম্যাচের ভাগ্য। ৪৮ মিনিটে বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার ইয়ান ভার্তোনোর ভুলের সুযোগে গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে গোল করেন গেঙ্কি হারাগুচি। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় জাপান। ঠিক এর ৫ মিনিট পরই জাপানের এগিয়ে যাওয়ার ব্যবধান ২-০!
এরপরই দুরদান্তভাবে ফিরে আসা ব্রলজিয়ামের। সবচেয়ে বেশি দূরত্ব থেকে হেডে গোল দেয়ার রেকরডও হয়ে যায় বেলজিয়ামের পক্ষে। এই গোলের মাধ্যমেই সমতায় ফেরে বেলজিয়াম।
ভীষণ রোমাঞ্চকর এই ম্যাচে দুই দলই কতটা মরিয়া হয়ে খেলেছে তার প্রমাণ পরিসংখ্যান। জাপান (১১) ও বেলজিয়াম (২৪) মিলে গোটা ম্যাচে ৩৫টি শট নিয়েছে। এই বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর কোনো ম্যাচে আপাতত এটাই সর্বোচ্চসংখ্যক শট নেওয়ার নজির।
আগের ম্যাচের একাদশে একটি-দুটি নয়, দশ-দশটি পরিবর্তন এনেছিলেন বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্তিনেজ। রোমেলু লুকাকু, এডেন হ্যাজার্ড, কেভিন ডি ব্রুইনারা ফিরেছেন একাদশে। জাপানের একাদশে ছয়টি পরিবর্তন এনেছিলেন কোচ আকিরা নিশিনো। শেষ ষোলোয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হারলেও মাথা উঁচু করেই বাড়ি ফিরবেন তাঁর শিষ্যরা। আর মার্তিনেজের শিষ্যরা? তাঁরা যে এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই বিশ্বকাপে এসেছেন, সেই প্রমাণ তো দ্বিতীয়ার্ধের খেলায়, হারের আগে হার না–মানার মানসিকতাই ম্যাচটা জিতিয়েছে বেলজিয়ামকে। এবার বেলজিয়ামের চোখ সামনের দিকে। সামনে যে আরো কঠিন প্রতিপক্ষ।
পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই এমন এক রোমাঞ্চকর জয়ই চাইছেন বেলজিয়াম সমর্থকেরা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply