সম্মেলনের দীর্ঘ এক বছর পর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃ প্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়েছে গতকাল সোমবার। এর পরপরই কমিটিকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মাঝে বিভেদ ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ এই কমিটিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মাঝেই প্রতিপক্ষ দৃশ্যমান। ছাত্রলীগের সূত্রগুলো বলছে, সাবেক নেতাদের সঙ্গে বর্তমানে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পর সংগঠনের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়। যার ফল সোমবারের মধুর ক্যান্টিনের ঘটনা। ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিতরা বলছেন, ত্যাগী ও দক্ষ ছাত্রনেতাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি কমিটিতে। আর সমন্বয়হীনতার কারণেই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিভেদ দেখা গিয়ে বলে মনে করেন ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। একই সঙ্গে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার করার বিষয়টিও রয়েছে বলে তারা মনে করেন।
জানা গেছে, এবার ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি হয়েছেন ৬১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন ১১ জন। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক সব সম্পাদক এবং সহ সম্পাদক ও উপসম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয় গত সোমবার।
এর আগে, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগ ২৯ তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিজেরা কমিটি করতে ব্যর্থ হলে ৩১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক অর্পিত ক্ষমতাবলে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন।
সোমবার ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বয়ে যায় পক্ষে বিপক্ষে সমালোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন অনেকে। তবে দীর্ঘ এক বছর পরে কমিটি নিয়ে সকল বিভেদের মূল কারণ হিসেবে সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, মূলত গত কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন কমিটির সাথে সমন্বয় না করে বর্তমান কমিটি ঘোষণার কারণে এই ধরনের বিভেদ ও মারামারির সৃষ্টি হয়েছে।
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাইফুর রহমান সোহাগ ও জাকির হোসেনের কমিটির যারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছিল বা ওই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায স্থান পেয়েছিল, বর্তমান পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের অনেকেরই ঠাঁই হয় নি। আবার অনেকে স্থান পেলেও তাদের প্রত্যাশা অনুসারে পদ দেওয়া হয় নি। অনেকে আবার গত কমিটির একই স্থানে রয়েছেন অথবা আগের স্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। আবার ত্যাগী বা পরিশ্রমী নেতারা যে পদ পাপ্য তা পায়নি। যা মূলত সিন্ডিকেটের একটি অংশ হিসেবে দেখছে অনেকেই।
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনের বর্তমান শীর্ষ দুই নেতা সাবেক নেতাদের বলয় থেকে সংগঠনকে বের করেতে চেয়েছেন। যার ফলে যারা সদ্য সাবেক শীর্ষ দুই নেতারা অনুসারী রয়েছেন তাদের অনেকে পদ পাননি। আবার অনেকে পদ পেলেও প্রত্যাশার চেয়ে ছোট পদ পেয়েছেন। এ কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পরই বিক্ষোভে ফেটে পরে ওই নেতা-নেত্রীরা।
তবে ছাত্রলীগের সদ্য পদ পাওয়া একাধিক নেতার দাবি, ছাত্রলীগের গত কমিটির সাবেক দুই শীর্ষ নেতার কারণেই তাদের নিজস্ব লোকেরা মধুর ক্যান্টিনে বিক্ষোভ করেছে।
জানা গেছে, গত সোমবার পদবঞ্চিতরা মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাদের জামাত-শিবির এসব বলে স্লোগান দিতে থাকে কমিটির পক্ষের নেতাকর্মীরা। পদবঞ্চিতরা অভিযোগ করেন, মূলত ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার ( শৌভন ও রাব্বানী) যারা অনুসারী ছিল তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের অনেকেই জানান, আমরা এই কমিটির বর্তমান সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মনোরঞ্জন অর্জন করতে পারিনি বলেই আমরা এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদ পাইনি।
তবে এ সকল অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের পদ-প্রাপ্ত শীর্ষ নেতারা বলেন, যারা বর্তমানের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সমালোচনা করছে, তারা মূলত বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ভাঙতে চায়। যা জামাত-শিবিরের চক্রান্ত হতে পারে।
এ দিকে গত সোমবার কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপরই পদবঞ্চিতরা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাদেরকে সংবাদ সম্মেলন করতে দেয় নি। পরে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই কমিটি বিলুপ্ত করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সংগঠনের পদ বঞ্চিতরা। তারা বলছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই কমিটি ভেঙে দেওয়া না হলে তারা বিক্ষোভ ও অনশন করবেন এবং যে কয়েকজন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন, তারা গণপদত্যাগ করবেন।
তবে ছাত্রলীগের মারামারির ঘটনাকে সামান্য ঘটনা বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের মধ্যে যে মারামারি হয়েছে এটি সাধারণ ঘটনা। এমন বৃহৎ সংগঠনে চাইলেও অনেকে পদ পায় না। তবে, যারা হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগের মারামারির বিষয়ে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ সংগঠনে লাখ লাখ নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে আছে। এক একটা সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী আছে এবং তারা সকলেই যোগ্য। সেই যোগ্য নেতা কর্মীরা সকলে পদ-পদবীর প্রত্যাশা করেন। সকলকে তো আর পদ-পদবী দেওয়া সম্ভব হয় না। স্বাভাবিকভাবেই যখন সকলে অন্তর্ভুক্ত হয় না বা অনেকে পদ পায় না তখন তাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি হতেই পারে, হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর ছাত্র সমাজের মধ্যে ক্ষোভটা একটু বেশি দেখা যায় । দেখা গিয়েছে যে অনেকে পদ পেয়েছে, তাদের প্রত্যাশা ছিল আরো বড় পদ পাওয়ার। সেই পদ না পেয়ে তাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি থাকতে পারে। যতটুকু জেনেছি, মধুর ক্যান্টিনের যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ছোট সামান্য ঘটনা। এটা নিয়ে আমার মনে হয় খুব উদ্বেগ প্রকাশ করার কিছু নেই। ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বসেই এটা ঠিক করে ফেলতে পারেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply