সারা বছর পাওয়া যায় এমন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লাল শাক। এটি রূপে যেমন মনোহারী গুণেও তেমন কার্যকরী। আবার খেতেও সুস্বাদু। পুষ্টিগুণে ভরপুর লাল শাক কিন্তু রোগ প্রতিরোধের দিক থেকেও অনেক শাকের চেয়ে এগিয়ে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, লাল শাকে এমন কিছু উপকারি উপদান রয়েছে, যা ৩০ বছরের পর থেকে শরীরের ভাঙন আটকানোর পাশাপাশি একাধিক রোগকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন এই শাকটি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরাও।
তারা বলেন, নিয়মিত লাল শাক খেলে আয়ু তো বাড়েই, সেই সঙ্গে সুস্থ জীবনের পথ অনেকাংশেই প্রশস্ত হয়।
এবার জেনে নিন নিয়মিত লাল শাক খেলে কী কী উপকার পাওয়া যায়-
হজম শক্তির উন্নতি:
লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেইসঙ্গে বাওয়েল মুভমেন্ট যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে এই সবজিটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজমের আশঙ্কা কমে। নিয়মিত লাল শাক খেলে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও হ্রাস পায়।
কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ে:
একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত লাল শাক খেলে একদিকে যেমন কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ে, অন্যদিকে রক্তে উপস্থিত একাধিক ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে রক্ত পরিশুদ্ধ হয়। এ কারণে নানাবিধ রোগের প্রকোপও কমে যায়।
অ্যানিমিয়ার চিকিৎসায়:
“লাল শাক খেলে রক্ত বাড়ে শরীরে”- এই কথাটা নিশ্চয় আপনি ছোটবেলায় শুনেছেন? আসলে এতে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই তো অ্যানিমিয়া রোগীদের এই শাকটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, ২ আঁটি লাল শাককে পিষে রস সংগ্রহ করে তার সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে যদি নিয়মিত খেতে পারেন, তাহলে শরীরে কখনও রক্তের অভাব হবে না।
দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি:
লাল শাকের মূল দিয়ে দাঁত মাজার পর লবণ জল দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের হলুদ ভাব কেটে যায়। সেইসঙ্গে পোকা লাগা সহ মাড়ি এবং দাঁত সম্পর্কিত নানাধিক রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
চুল পড়া কমে:
এক আঁটি লাল শাঁক ভাল করে বেটে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর তাতে ১ চামচ লবণ মিশিয়ে ভালো করে নাড়িয়ে নিন। যখন দেখবেন দুটি উপাদান ঠিকমতো মিশে গেছে, তখন মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এমনটা প্রতিদিন করলে চুল পড়ার হার অনেকটাই কমে যাবে।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়:
লাল শাকে উপস্থিত ভিটামিন সি রেটিনার ক্ষমতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। তাই যারা চোখে কম দেখেন বা পরিবারে গ্লকোমার মতো রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই লাল শাক খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন অল্প দিনেই উপকার পাবেন।
ক্যান্সারকে দূরে রাখে:
লাল শাকে উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি রয়েছে। এগুলো শরীরে উপস্থিত একাধিক টক্সিক উপাদানের ক্ষতি করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ক্যান্সার সেল যাতে জন্ম নিতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই মারণ রোগ আর শরীরে বাসা বাঁধার কোন সুযোগ পায় না।
জ্বরের প্রকোপ কমায়:
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে যারা জ্বরে ভুগছেন, তারা এই ঘরোয়া পদ্ধতিটির সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা প্যানে পরিমাণ মতো জল নিয়ে তাতে এক মুঠো লাল শাক ফেলে দিন। তারপর জলটা ফোটাতে শুরু করুন। যখন দেখবেন ফুটতে ফুটতে জলের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেছে, তখন আঁচটা বন্ধ করে দিন। এরপর জলটা ঠাণ্ডা করে সেটা পান করুন। এমনটা করলে দেখবেন কয়েকদিনেই জ্বর ছেড়ে গেছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিঃ /- ক.আ।
Leave a Reply