নিজ বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিক আদালতে দাবি করেছেন, ওই টাকা তার বেতন-ভাতার।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকাকালীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলায় জড়িত থাকার অভিযোগে করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আজ সোমবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েসের আদালতে এক প্রশ্নের জবাবে পার্থ এ দাবি করেন।
আজ বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন এ কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন।
আবেদনে মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভুত ৮০ লাখ টাকা পাচারের উদ্দেশে আসামি নিজ ঘরে রাখে। ওই টাকা নিয়ে সে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল। এ ছাড়া সে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিনষ্টসহ সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। সে এই মূহূর্তে জামিন পেলে গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করতে পারে এবং তদন্তেরও বেঘাত ঘটবে।’
পরে ৫টার দিকে আসামিপক্ষে জামিনের আবেদন করে শুনানি করেন ঢাকা বারের বর্তমান সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা গাজী শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রচি, সাবেক সভাপতি বিএনপি নেতা মাসুদ আহমদ তালুকদার, খোরশেদ আলম এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওমী লীগ নেতা আবদুর রহমান হাওলাদার ও অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।
শুনানিতে তারা দাবি করেন, টাকাগুলো অবৈধ উপায়ে অর্জন করা নয়। তিনি আয়কর রির্টানে তার হাতে নগদ ৩০ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। বাকি টাকা তার মা এবং শাশুড়ি তাকে ফ্ল্যাট কেনার জন্য দিয়েছেন। গত বছর তিনি ১ লাখ ৯ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছেন। তিনি চাকরির পাশাপাসি ব্যবসাও করেন। আর কেউ উনাকে ঘুষ দিয়েছেন এ বিষয়ে অভিযোগও করেননি। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি জামিন পেলে পলাতক হবে না।
অন্যদিকে দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধীতা করে শুনানিতে বলেন, ‘আয়কর ফাইল অনুযায়ী এক বছরে তার বেতন থেকে আয় ছয় লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং ১৫ লাখ টাকা তিনি ব্যবসা থেকে আয় করেছেন। একজন সরকারি কর্মচারী কী ব্যবসা করেন। বছরে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা বেতন পেয়ে সংসার চালিয়ে কত টাকা সাশ্রয় করতে পারেন যে, ৮০ লাখ টাকা তার বাসায় পাওয়া যেতে পারে। টাকাগুলো সবই অবৈধ উপায়ে অর্জন করা। আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে। তাই আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক।’
আইনজীবীদের শুনানির সময় বিচারক কাঠগড়ায় থাকা আসামি পার্থ গোপাল বণিককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার বেসিক কত?’ উত্তরে তিনি জানান, ৩০ হাজার টাকা। বাসায় যে টাকা পাওয়া গেছে সে টাকা কোথা থেকে তুলেছেন, বিচারকের এমন প্রশ্নের উত্তরে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পোস্ট অফিসে এফডিআর করা ৩০ লাখ টাকা ছিল, তা তুলেছি। টাকাগুলো আমার বেতন-ভাতার টাকা।’ আয়কর নথিতে টাকাগুলো দেখানো আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পার্থ বলেন, ‘আইনজীবী ভুল করে টাকাগুলো দেখায়নি।’
আসামির বক্তব্য এবং উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডি থানাধীর নর্থ রোডের ভূতেরগলি এলাকার গোপাল বণিকের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করে দুদক। পরে সোমবার এ ঘটনায় মামলা করে দুদক।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিলসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস।
ওই সময় তিনি গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে নিজের ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন। সেই থেকে কারাগারের বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। উঠে আসে কারাগারকে মাদকের হাট বানানোর গল্প। আর সেই গল্পের সূত্র ধরে দুদকের অনুসন্ধানি দল সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে পার্থ গোপালকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে গতকাল রোববার দুপুর ২টার দিকে ফ্ল্যাটে অভিযানে গেলে সেখানে না ঢুকতে দিয়ে বণিকের স্ত্রী ডা. রতন মনি সাহা প্রায় দুই ঘণ্টা দুদক টিমের সঙ্গে টালবাহানা করেন। প্রথমে দুদক সদস্যদের মুঠোফোনে বলেন, ‘পার্থ বাসায় নেই, মিরপুরে আছেন। সেখান থেকে ফিরতে ২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে।’ অথচ সে সময় পার্থ ফ্ল্যাটেই ছিলেন। এরপর দুদক টিম বিকল্পভাবে ভেতরে প্রবেশের কথা জানালে দরজা খুলে দেন মনি সাহা। তবে দরজা খোলার আগেই বাসায় রাখা ওই ৮০ লাখ টাকা দুটি বস্তায় ভরে পাশের বাসার ছাদে ফেলে দেন পার্থর স্ত্রী। পরে তাকে নিয়েই ওই টাকা উদ্ধার করা হয়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply